বার আউলিয়া এর ইতিহাসঃ
নানান জীব বৈচিত্র্য, অফুরন্ত ফুল ফসল আর শত শত মসজিদে ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী। উপজেলা সদর হতে ৯ কিঃ মিঃ উত্তর-পূর্বে মির্জাপুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া মাজার শরীফ। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এখানে ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার এখানে ওয়াজ মাহফিল, কোরআন খানি, কবর জিয়ারত ও তবারক বিতরণ এবং ভক্ত জনরা মানতের টাকা পয়সা, ধান-চাল মুরগি কবুতর ও গরু ছাগল দান করবেন।
বার আউলিয়াদের আগমনের ইতিহাস বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেলেও ওলীদের ইতিহাস রহস্যাবৃত্ত। তাদের লিখিত কোন ইতিহাস আজও পাওয়া যায়নি। বার জন ওলী সুফি সাধক চট্রগ্রামের শহর প্রান্তে প্রথমে এসে আস্তানা স্থাপন করেন। সেই জায়গাটি আজও বার আউলিয়া নামে প্রসিদ্ধ। জানাগেছে, বার জন ওলী খাজাবাবার নির্দেশে চট্রগ্রামসহ পূর্ব বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থান গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। পরে স্থল পথে রওয়ানা হয়ে ইসলাম প্রচার করতে করতে উত্তর বঙ্গের শেষ প্রান্তে এসে পৌছান এবং পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বার আউলিয়ায় আস্তানা গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। আটোয়ারী মাটিকে পূর্ণ ভূমিতে পরিণত করার পর সময়ের বিবর্তনে ওলীদের এখানেই সমাহিত করা হয়। গড়ে উঠে বার আউলিয়ার মাজার শরীফ।
মূল বাজারের চারিদিকে বিশাল এলাকা জুড়ে ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। জঙ্গলে বাঘ ভাল্লুক ও বুনো শুকর সহ হিংস্র জীবজন্তু বাস করত। মাজারের উপরের ছনের ঘর ছিল। ওরশের আগের দিন মাটি দিয়ে মাজার শরীফ মোছা হত। কথিত আছে ২টি বাঘ ও ২টি সাপ সব সময় মাজার পাহাড়া দিত। মাজারের পার্শ্বে একটি কাঠের দানবাক্স ছিল। সেখানে ভক্তজনেরা মানতের টাকা-পয়সা ফেলত। কেউ চুরির উদ্দেশ্যে বাক্সের কাছে গেলে সাপ দ'ুটো বের হতো আর খারাপ উদ্দেশ্যে কেউ গেলে বাঘ দ'ুটো বের হত। তবে বসবাসরত খাদেম আলী শাহের স্ত্রী সপ্তাহে একদিন মাটি দিয়ে মাজার মুছতে যেত। এতে বাঘ বা সাপ বের হত না। বর্তমানে সেই গভীর জঙ্গল নেই।
এখানকার ইতিহাস শুধু মাজার উন্নয়নের ইতিহাস। ১৯৯০ সালের দিকে পঞ্চগড় জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল বাশার আহাম্মদ একদিন জীপ গাড়িতে বার আউলিয়ার মাজার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠ্যাৎ তার জীপ বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টার পরেও জীপের ইঞ্জিন চালু না হওয়ায় ন্থানীয় লোকজন মাজার শরীফ দেখিয়ে দেন। তিনি তৎক্ষনাৎ ওজু করে মাজার জিয়ারত করেন এবং কোন বেয়াদবি হলে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। প্রার্থনা শেষে জীপে বসে চাবি দিলেই বিনা ধাক্কায় জিপের ইঞ্জিন চালু হয়। ওইদিন রাতেই তিনি ওলীদের দ্বারা স্বপ্নে বার আউলিয়া মাজার উন্নয়নের নির্দেশ পান এবং পরের দিন সকালে তিনি আবার মাজার জিয়ারত করতে আসেন। সেই সঙ্গে তার অসুস্থ্য দুই পুত্রের জন্য মানত করে মাজার উন্নয়নে এগিয়ে আসেন। তার আহব্বানে এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগে এবং প্রথমে তিনি ওলীদের কবরের উপর একটি পাকা দালান নির্মাণ করেন। উল্লে-খ্য হেমায়েত আলী শাহ্ (রঃ) ও নিয়ামত উল্ল্যাহ শাহ (রঃ) একসঙ্গে রয়েছেন, যা জোড়া কবর বলে পরিচিত। কিছুদিন পর উপজেলার নলপুখুরী গ্রামের মোঃ খলিলুর রহমান অবশিষ্ট ১০ জন ওলীর কবরের প্রতিটি চার পাশ্বে দেওয়াল নির্মাণ করেন। এরপর তৎকালীন স্পীকার, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী মহরুম মির্জা গোলাম হাফিজের প্রচেষ্টায় প্রায় ৯০ একর জমিতে মাজার কমপ্লেক্স, গোরস্থান, পুকুর, মসজিদ, মাদ্রাসা ও ডাকবাংলো নির্মিত হয় এবং ১০ একর জমিতে খাদেম গণের বাসস্থান রয়েছে। ১৯৯৪ সাল থেকে অদ্যাবধি সরকারী ভাবে পদাধিকার বলে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সভাপতি জেলা দায়রা জজ ও পুলিশ সুপার যথাক্রমে সহ-সভাপতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সদস্য সচিব, আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় (মির্জাপুর) ইউপি চেয়ারম্যান, (খাদেম) গোষ্ঠির একজন ও স্থানীয় গণ্যমান্য একজন ব্যক্তি নিয়ে মাজার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটি দায়িত্ব পালন করেন। মাজার শরীফে পবিত্র ওরশ মোবারকের দিন এখানে ওয়াজ মাহফিল, কোরআন খানি, কবর জিয়ারত ও তবারক বিতরণ করা হয় এবং ভক্ত জনরা মানতের টাকা পয়সা, ধান-চাল মুরগি কবুতর ও গরু ছাগল দান করেন। এইদিন মাজারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে আগত কয়েক লাখ ভক্ত ধর্ম প্রাণ মানুষের সমাগম ঘটে।
তবে স্থানীয় মুরব্বিরা আক্ষেপ করে বলেছেন, কয়েক বছর ধরে মাজারের সার্বিক উন্নয়নের নাম করে সুবিধা ভোগী একটি মহল নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে দেখছেন। ফলে বিভিন্ন ভাবে বাধাগ্রস্থ্য হচ্ছে মাজারের পবিত্রতা